যেদিন ছেলের মুখে শুনব বাবার ডাক, সেদিনই হবে জন্মদিন


বাগেরহাট নিউজ ২৪ ডেস্ক প্রকাশের সময় : জুন ২, ২০২৫, ১০:৩১ পূর্বাহ্ন /
যেদিন ছেলের মুখে শুনব বাবার ডাক, সেদিনই হবে জন্মদিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

শৈশবে জন্মদিন ছিল কুমার বিশ্বজিতের প্রিয় দিনগুলোর একটি। সংগীতজীবনের চার দশক পার করা এই জনপ্রিয় শিল্পী তখন স্বপ্ন দেখতেন, যেন জন্মদিনটি বছরে একবার নয়, প্রতি পাঁচ দিন পরপর আসে! কারণ, ওই বিশেষ দিনে তাঁর ইচ্ছেগুলো গুরুত্ব পেত ভিন্নভাবে। কেক বা নতুন জামাকাপড়ের চাইতে তাঁর চাওয়া থাকত আরও আলাদা কিছু।

তবে এখন সময় বদলে গেছে। বিগত দুই বছর ধরে এই দিনটিকে ঘিরে আর কোনো উত্তেজনা বা অনুভব কাজ করে না তাঁর মধ্যে। কারণও স্পষ্ট। গতকাল ১ জুন ছিল তাঁর জন্মদিন। কিন্তু গত দুই বছর ধরে তিনি এদিনটি কাটাচ্ছেন কানাডায়। সেখানে তাঁর একমাত্র ছেলে নিবিড় কুমার একটি দুর্ঘটনার পর থেকে চিকিৎসাধীন।

গতকাল রাতে, বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী, যখন তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন তিনি যাচ্ছিলেন মিসিসাগার একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে, যেখানে নিবিড় এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন। জন্মদিনের আনন্দের জায়গায় এসেছে এক ধরনের উদ্বেগ, অপেক্ষা আর প্রার্থনা—ছেলের সুস্থতার জন্য।

কুমার বিশ্বজিৎ জানান, জন্মদিন, বিশেষ দিন—সব দিনই এখন তাঁর কাছে মলিন। তিনি বলেন, ‘ছেলে বড় হওয়ার পর থেকে আমার জন্মদিন নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল ওর। বাবার কাছে সময় চেয়ে নিত। সন্ধ্যায় একসঙ্গে ঘুরতে বের হতো। কেক কাটত। আমাকে নিয়ে ছেলের উৎসাহ সবচেয়ে বেশি ছিল। কানাডায় পড়াশোনা করতে যাওয়ার পরও শুধু আমার জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিতে কাউকে কিছু না বলে চলে যায়। তারপর কয়েকটা দিন থেকে আবার কানাডায় চলে আসে। আমার সেই হাসিখুশি ছেলে দুই বছর ধরে শয্যাশায়ী। কথা বলতে পারে না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এখন আমার কাছে দিন–রাত সবই সমান। নিবিড় যেদিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে, আমাকে “বাবা” বলে ডাকবে, সেদিনই আমার জন্মদিন।

কুমার বিশ্বজিৎ জানান, জন্মদিন, বিশেষ দিন—সব দিনই এখন তাঁর কাছে মলিন। তিনি বলেন, ‘ছেলে বড় হওয়ার পর থেকে আমার জন্মদিন নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল ওর। বাবার কাছে সময় চেয়ে নিত। সন্ধ্যায় একসঙ্গে ঘুরতে বের হতো। কেক কাটত। আমাকে নিয়ে ছেলের উৎসাহ সবচেয়ে বেশি ছিল। কানাডায় পড়াশোনা করতে যাওয়ার পরও শুধু আমার জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিতে কাউকে কিছু না বলে চলে যায়। তারপর কয়েকটা দিন থেকে আবার কানাডায় চলে আসে। আমার সেই হাসিখুশি ছেলে দুই বছর ধরে শয্যাশায়ী। কথা বলতে পারে না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এখন আমার কাছে দিন–রাত সবই সমান। নিবিড় যেদিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে, আমাকে “বাবা” বলে ডাকবে, সেদিনই আমার জন্মদিন।’

ছোটেবেলায় জন্মদিনের কয়েক দিন আগে থেকেই কুমার বিশ্বজিৎ পরিবারের সদস্যদের কাছে বায়না ধরতেন, তাঁকে বাদ্যযন্ত্র উপহার দিতে হবে। শৈশবের সেই দিনগুলোয় উপহার হিসেবে পেয়েছেন ড্রামস, গিটার, বেজ গিটারসহ নানা কিছু। এই উপহারগুলো পেতে তিনি দিনের পর দিন অপেক্ষা করতেন। জন্মদিনের এই উপহারগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর অনেক স্মৃতি। কিছু উপহার তাঁর জীবন বদলে দিয়েছে। জন্মদিনের সেরা উপহার হিসেবে একবার তিনি একটি টেপ রেকর্ডার পেয়েছিলেন। তখন তিনি চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। পরে সেই টেপ রেকর্ডার তাঁর ক্যারিয়ারে শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছিল।

এই গায়ক বলেন, ‘টেপ রেকর্ডারের প্রতি আমার সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ ছিল। আমি তখন গান শুনতাম আর সুরগুলো রেকর্ড করতাম। অনেক সময় গান গেয়ে নিজের রেকর্ড করা কণ্ঠ শুনতাম। মূল শিল্পীর গায়কির সঙ্গে তুলনা করতাম। তাদের গান শুনে আমি সুর, তাল, লয় শিখতাম। তখন প্রযুক্তির এত অগ্রগতি হয়নি। এই টেপ রেকর্ডারই আমার ভুল ধরার জন্য শিক্ষকের মতো ছিল।’

শৈশবে জন্মদিন উদ্‌যাপন ভালো লাগলেও এখন সংকোচে কাটে জন্মদিনটি। এই দিনে অসংখ্য মানুষ কুমার বিশ্বজিৎকে শুভেচ্ছা জানান, ভালোবাসা জানান। এতেই তাঁর সংকোচ। তাঁর কাছে মনে হয়, এই প্রাপ্তির চেয়ে হয়তো তাঁর কাজ অনেক কম।