পুড়ে ছাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চার ঘন্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আগুন

চিতলমারী বানিজ্যিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড, নারীর মৃত্যু, আহত ৪৪


বাগেরহাট নিউজ ২৪ ডেস্ক প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৭, ২০২৫, ১:৪৩ অপরাহ্ন /
চিতলমারী বানিজ্যিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড, নারীর মৃত্যু, আহত ৪৪

নিজস্ব প্রতিবেদক,

বাগেরহাটের চিতলমারীতে মাইশা টাওয়ার নামের একটি ৫ তলা বানিজ্যিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে শ্বাসরোধ হয়ে অনিতা রায় (৪০) নামে এক নারী গৃহপরিচারিকার মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৪৪ জন। সোমবার (০৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চিতলমারী উপজেলা সদরের মাইশা টাওয়ারে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে ব্যবসায়ী ও ভবনের বাসিন্দাদের ডাক চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসেন।

খবর পেয়ে চিতলমারী ফায়ার সার্ভিসও ঘটনাস্থলে পৌছায়। একে একে বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ ও খুলনার ৮টি ইউনিট অগ্নি নির্বাপন ও উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। এর সাথে যোগদেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা। প্রায় ৪ ঘন্টার সমন্বিত চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। তবে এই সময়ের ভবনের নিচে থাকা এমআরএম ফ্যাশনসহ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ভস্মিভূত হয়ে যায়। ভবনের তৃতীয় তলায় থাকা সুস্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ক্লিনিকের রোগীসহ অন্তত ৪৪ জন আহত হয়। ভবন থেকে আহতসহ প্রায় ৮০জনকে উদ্ধার করে সেনাবহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকা ব্যাংকের শাখাগুলোর তেমন কোন ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

সোনালী ব্যাংক চিতলমারী শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগুনে ভবনের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হলেও, ব্যাংকের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। তবে ব্যাংক কার্যালয় এখনও আমরা বুঝে নেইনি। সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ব্যাংকের শাখাগুলো নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।

নিহত অনিতা রায় চিতলমারী উপজেলার শিবপুর-কাটাখালী এলাকার দেবদাসের স্ত্রী। তিনি ধীর্ঘদিন ধরে ওই ভবনে থাকা সুস্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ক্লিনিকের মালিক ডা. তাপসের গৃহপরিচালিকা হিসেবে কাজ করতেন।

এমআরএম ফ্যাশনের মালিকের দুলাভাই শামীম শেখ বলেন, উপজেলার সব থেকে বড় পোশাক ও জুতার শো-রুম ছিল এটি। এখানে আমাদের প্রায় ২০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ছিল। এই শো-রুমের আয় থেকে আমাদের কয়েকটি পরিবার চলত। আগুনে আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। আমরা নিস্ব হয়ে গেলাম।

এই ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে আরএফএলের শোরুম, প্রথম তলায় এমআরএম ফ্যাশন হাউসসহ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দ্বিতীয় তলায় সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়াসহ চারটি ব্যাংকের শাখা, একটি বিমা কোম্পানির অফিস, তয় তলায় সুস্বাস্থ্য ও পরিচর্যা নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিক, ৪র্থ ও ৫ম তলায় ছিল বাসা বাড়ী। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রবাসী মোঃ আনিসুর রহমান থাকেন ব্রুনাইয়ে।

আনিসুর রহমানের বোন রুমানা আক্তার বলেন, এই ভবনই আমাদের একমাত্র সম্বল। আমাদের সব স্বপ্ন ছিল এই ভবনকে ঘীরে। ফ্যাশন হাউস পুড়ল, অনেকে আহত হয়েছে। ভাইয়া আগুনের খবরে বিদেশে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন, এমন বিপদে যেন কেউ না পড়ে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

এদিকে আগুনে আহতদের মধ্যে ৪৪জন চিকিৎসা নিয়েছেন চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক মুক্তি বিশ্বাস।

তিনি বলেন, আমরা এখানে ৪৪ জনকে চিকিৎসা দিয়েছি। ৪জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রায় ৪০ জন আমাদের এখানে ভর্তি রয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্থানীয় সবুর মিয়া বলেন, আগুনের খবর পেয়ে আমরা সবাই ছূটে যাই। ক্লিনিকে ভর্তি রোগীদের উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। অনেককে সিড়ি দিয়ে নামিয়েছি, আবার রং করার জন্য একটি সিড়ি ছিল, সেটি দিয়েও অনেককে নামিয়েছি। কয়েকজনকে নামানোর পরে আমি নিজেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ি। এখন হাসপাতালে আছি।

এদিকে আগুন নেভানোর সুবিধার্থে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভবনের সামনের চিতলমারী প্রধান সড়কটি বন্ধ ছিল। এছাড়া আগুনের খবরে উপজেলা সদরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পৌনে ৫টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করে পল্লী বিদ্যুৎ।

চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শাহদাৎ হোসেন জানান, চারতলার সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় মারা যাওয়া নারীর মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। তারা জেলা প্রশাসকের কাছে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তরের আবেদন করেছেন। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সে অনুযায়ী, আমরা ব্যবস্থা গ্রহন করব।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ আবু বক্কর জামান জানান, আগুন নেভাতে খুলনা, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জের আটটি ইউনিট চার ঘন্টা পানি ছিটিয়ে দুপুরের দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। ভবনের নিচতলার একটি পোশাকের দোকান থেকে বিদ্যুতের শট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।

বাগেরহাট সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন মো. রায়হান জানান, আগুনে ভবনে থাকা ক্লিনিকে ভর্তি রোগী এবং আবাসিকে কিছু মানুষ আটকে পড়ে। সেনা সদস্যরা তাদের নিরাপদে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৮০জনকে আমরা নিরাপদে সরিয়ে এনেছি। এরমধ্যে যারা রোগী ছিলেন তাদের হাসপাতালে ভর্তি করেছি।